শামীমা বিনতে রহমান
“এই যে রিপোর্টার সাব”
ডান দিকে বিস্তৃত খাস জমিতে লবণ মাঠ আর বঙ্গোপসাগর রেখে ১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ের পর শক্ত পোক্ত করা বাঁধের উপর দিয়ে হাঁটার সময় এরকম ডাক শুনে খেয়াল করে দেখলাম একটা ছোট্ট ছনের ঘরে দুইজন মাঝ বয়সি দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরা হাসি হাসি মুখ। “টি? ওয়ান্ট টি?”
ভেতরে ঢোকার পর জানালেন, তিনি আমাকে ‘বসতভিটা কবরস্থান রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র সমন্বয়ক লিয়াকত আলীর সংবাদ সম্মেলনে দেখেছেন, যেই সংবাদ সম্মেলনটি হয়েছিল স্থানীয় পশ্চিম বাঁশখালি গণ্ডামারা রাহমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়।
“আচ্ছা, আপনি ওখানেও ছিলেন?” একটা ঘরবাড়িহীন বাঁধের ওপর চায়ের টং দোকানে ঢুকতে ঢুকতে কথা শুরু করলাম।তিনি হাসতে হাসতে বল্লেন, “আমি দুই দিকেই আছি। ওই দিকেও যাই, এদিকেও এস আলমের কাজ করি”।
ইংরেজিতে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো ব্যক্তিটি সাদা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা কার্ড বের করলেন।তার ভিজিটিং কার্ড। তাতে তার পরিচয় আল্লামা মুফতি আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক ডায়মন্ড হজ্ব গ্রুপস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস। উনার আরো পরিচয় হিসাবে উল্লেখ করা আছে কার্ডে, তিনি মহাবিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব।পশ্চিম বড়ঘোনা গ্রামের এই বাসিন্দা জানালেন তিনি এস আলমের সাইট অফিসে ‘টুকটাক’ কাজ করেন।
চট্ট্রগ্রাম শহরের নতুন বাজার থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলি, শঙ্খ নদী আর জলকদর খাল পার হয়ে পশ্চিম বাঁশখালির গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনে গত ৪ এপ্রিল, ৪ বাসিন্দা খুন ঘটনার পর ওই এলাকায় গেলে, এই ব্যক্তির সাক্ষাৎ মেলে বাঁধের ওপর।
বঙ্গোপসাগরের পাড় ঘেঁষা বিস্তৃত বাঁধের ভেতরের দিকটা পশ্চিম বড়ঘোনা গ্রাম। এখানেই চলছে এস আলম গ্রুপ, চীন দেশের দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন আর সরকারের সমর্থনে ১ হাজার ২শ ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প।কিন্তু সাইট অফিসে কোন সাইনবোর্ড নাই।
বাঁধের ওপর একটা সবুজ রঙের টানা ঘরই এস আলমের প্রকল্প এলাকার ভেতরের অফিসটি। মুফতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এলাকাবাসীর আন্দোলনের কারণে অফিস দৃশ্যত খোলা রাখা হয় না, তবে কাজ চলছে। এখন চলছে জায়গা ভরাটের কাজ”।
ওইখানে কিছু খাদ, গর্ত করার যন্ত্র এক্সকেভেটর, লোহার পাইপ ইত্যাদি দিয়ে চলছে দেশের বেসরকারি পর্যায়ে সবচে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।
এস আলম গ্রুপের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা বলতে বাঁশাখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের যে অংশটুকু বোঝায় অর্থাৎ পূর্ব মধ্য পশ্চিমে বিভক্ত গণ্ডামারা আর বড়ঘোনা গ্রাম দুটি নিপাট, ঝরঝরে, সামর্থময় কৃষি পরিবারের ঘরবাড়ি। লবন, চিংড়ি চাষী, টমেটো চাষী, মরিচ চাষী, জেলেদের ঘরবাড়ি।
খালি চোখে যেমন দেখা গেছে মাটির ঘরের দেয়াল ভেদ করে চলে যাওয়া গুলির দাগ, তেমনি ক্যামেরা স্থির হয়েছে নারীর গুলিবিদ্ধ আঙ্গুলে, এখানে-সেখানে মাঠে পড়ে থাকা এস আলম গ্রুপের উন্নয়ন যন্ত্র এক্সকেভেটরে, লবন মাঠে, মাদ্রাসা ফেরত শিশুর হাসিতে, আরো অনেক কিছুতে।
আসুন দেখি আলোকচিত্রগুলা।