fbpx
জুম ভিডিও আড্ডার স্ক্রিন শটে পপ টোন এডিটিং। কাজল শাহনেওয়াজ। বাংলাদেশের লেখক।
জুম ভিডিও আড্ডার স্ক্রিন শটে পপ টোন এডিটিং। কাজল শাহনেওয়াজ।

“একটা অ‍্যাপ তৈরির পেছনে পরিকল্পনা থাকে যেভাবে, একটা কবিতা, গল্প লেখার ক্ষেত্রে ঠিক সেই ধরনের পরিকল্পনা করি আরকি।”

কাজল শাহনেওয়াজের সঙ্গে আড্ডা/ পর্ব ২

একটা ফর্মাল-ইনফর্মাল মিক্সড আড্ডা, শামীমা বিনতে রহমানের সঙ্গে। 🙂

 

কাজল শাহনেওয়াজ ওরফে কাশা গত পর্ব মানে কাজল শাহনেওয়াজের সঙ্গে আড্ডা – ১ শেষ করসিলেন গত শতকের আশির দশকে তখনকার স্বৈরাচার নামে খ‍্যাত এরশাদ সরকারের সেনা শাসনের দিনগুলিতে দপ করে বিশ্ববিদ‍্যালয় ছুটি হয়ে গেলে বিবাহিত আইডেন্টিটিঅলা নারী প্রেমিকার কাছে তার চলে যাওয়ার গল্প দিয়া। দুই ছোটগল্পের বই কাছিমগালা এবং গতকাল লাল নিয়ে কথাবার্তা শুরু হৈলেও সেইটা নানা, বিভিন্ন গন্তব‍্য অগামি অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। এই পর্বটা একদমই কাশার গদ‍্য নিয়া। তার দুই গল্পের বই এবং উপন‍্যাস শে।

কাছিমগালা, বাসেত চরিতনামা, বাসেত হিরনচি, চাঁদের ব্লেড, অত‍্যন্ত সাধারণ একটি বিকাল, আবুল সুন্দর, উত্তম ভায়াগ্রা – এরকম আরো গল্পদের সাইড-গল্প।

তার প্রথম গল্প লেখার অভিজ্ঞতা যেমন বলতেসিলেন তিনি টুকরা টুকরা করে লিখতেন, এক বসায় না,: “একটা কোন গাঁজার আড্ডায় লিখলাম, একটা শশ্মানে লিখলাম, একটা অমুক জায়গায় লিখলাম, তমুক জায়গায়, একটা গার্ডেন লিখলাম, হ‍্যা, এইরকম বিভিন্ন জায়গায় টুকরা টুকরা করে লেখা।”

 যেন রোনাল্ড বার্থাসের “সার্কেল অব ফ্রাগমেন্টস”।

আবার তাকে কিছু প্রশ্নের ঝাপটায় যাইতে হয়। আপাত দৃষ্টিতে ঝাঁঝের মনে হৈলেও আদতে সেইগুলা নাম্ব এবং নভিস-টাইপ, শুধু কয়েকটা কি, এবং কেন টাইপ শব্দ যুক্ত। যেমন: তিনি কেন শে- নারীবাচক সর্বনাম ব‍্যবহার করেন তার লেখায়, আপনি কি নিজেকে ফেমিনিস্ট মনে করেন? আপনাকে কি কখনো লেখালেখির জন‍্য যৌনতার ট‍্যাগের মধ‍্যে পড়তে হৈসে?, ইত‍্যাদি। সেইসবে কিছু অমিসিং স‍্যাটায়ার উৎপাদিত হয় জুম আড্ডায়। অনেক হা হা হা -হি হি হি হয়। 

দেখুন কাজল শাহনেওয়াজের সঙ্গে আড্ডা: শব্দ।সঙ্গ। এবং ড্রাগস’র দ্বিতীয় পর্ব।

ভিডিওর নিচে স্ক্রল করতে থাকলে পড়তে পারেন এই আড্ডার দুইটা স্ক্রাপ। একটা শুরুর দিক থেকে মাঝখানের দিকে যাওয়ার সময়ের, আরেকটা আড্ডার শেষের দিকে। 

 

স্ক্রাপ – ১: “ওইটা ছিল আমার প্রথম হেরোইন খেয়ে লেখার অভিজ্ঞতার রাত একটা। অভিজ্ঞতার গল্প।”

কা.শা.: . . . সারাজীবন ওই ইউনিভার্সিটিতে একটা রুমেই আমি থাকছি, অন‍্য কোন রুমে আমি যাই-ই নাই। কিন্তু ওই রুমের সাথে আমার ক‍্যামন একটা জানি বায়োলজিক‍্যাল বন্ড তৈরি হয়ে যায় যে আমি ৭/৮ বছর ইউনিভার্সিটিতে থাকলাম, আমি পুরাটাই ওই রুমের ভেতর ছিলাম। ওই রুমের ভিতর ওই তসলিমা নাসরিনের বোন আরেকজনের সাথে ই-করলো মানে ওরা ডেটিং করলো, ডেটিং কৈরা, মানে যেই ছেলের সাথে ডেটিং, ও-ও আমার বন্ধু, ও আমার কাছ থেকে চাবি নিতো। বিভিন্ন জন চাবি নিয়া ই-করতো আর কি, মাঝে মাঝে ডেটিং করতো. . . হা হা হা . . .

শা.বি.র.: হা হা হা . . .

কা.শা.: মানে এইটা সারাক্ষনই কেউ না কেউ ওইখানে থাকতো, এবং ওইখানে গেলে খাইতে পারতোই। দরজার কাছে চাবি থাকতো। দরজার পাশে জানালার নিচে, জানালার নিচে একটা ইয়া থাকে না, ওই যে বাতাস আসা-যাওয়া করার আরেকটা ছোট্র জানলা আর কি। এই মাস্তান-টাস্তান এদের সাথে আমার খাতির ছিল, এইরকম বহু মাস্তান, ওরা ভিতরে ভিতরে, ওরা আসলে কবি ছিল। এদের আমি পরে পাইসি যে হয়তো আমি নাই, রুমে নাই, দুপুরে কোন এক সময়, বিকালে কোন এক সময় আসছিলো। আইসা একা বইসা কিছুক্ষণ তামাক-টামাক খাইয়া, তারপর একটা কবিতা লেইখা, তারপর চইলা গ‍েছে। 

শা.বি.র.: হা হা হা  . . .

কা.শা. : হ‍্যা, মানে ও -হো – হো – হো. . . মানে ওইটা ছিল একটা সাইকো ইয়া আর কি . . .

শা.বি.র.: মানে ওইটা একটা টেম্পোরারি অটোনোমাস জোন 

কা.শা.: হ‍্যা-অ‍্যা. . . হে হে হে

শা.বি.র: আচ্ছা কোন পাঠক যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে কাছিমগালা বই থেকে আপনার প্রিয় গল্প কোনটা? আপনি কি এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বস্থি বোধ করেন না তো? আপনি কি সিলেক্ট করতে পারবেন?

কা.শা.: না এম্নিতেই কাছিমগালা গল্প এই নামে যে গল্পটা, এইটা আমিও খুব পছন্দ করি। 

শা.বি.র.: এইটা তো আমার মনে হয় সবচাইতে বেশি পাঠক . . .

কা.শা.: হ‍্যা, অ‍্যাজ অয়েল অ‍্যাজ . . . মানে অনেকেই এইটা পছন্দ করসে। কিন্তু আমি এই গল্পটার সাথে আমার একটা স্পিরিচুয়াল ব‍্যাপার আছে। মানে, সেইটা হৈল, . . . ওইটা ছিল আমার প্রথম হেরোইন খেয়ে লেখার অভিজ্ঞতার রাত একটা। অভিজ্ঞতার গল্প। সন্ধ‍্যা পর্যন্ত আমার মনে আছে যে আমি আর রিফাত খেলাম। রাত ১০টার দিকে ও চলে গেল। রাত ১০/১২টার দিকে চলে গেল। তখনও আমরা শেষ ইয়াটা খাওয়ার পরে একটা পোটলা নিয়া নিতাম, যার যার  . . .

শা.বি.র.: হুম-উম-উম

কা.শা.: তো আমি ওই যেইটা নিসিলাম, সেইটা সারারাত একটু একটু করে খাই আর লিখি। একটু খাই আর লিখি। এরকম করতে করতে হঠাৎ দেখি যে রুমের লাইটের চেয়ে বাইরের লাইট বেশি দেখা যাইতেসে। কী ব‍্যাপার! আমি দেখি সকাল হয়া গেছে। এই লিখতে লিখতে সকাল হয়ে যাওয়া এইটা আমার কখনো ঘটে নাই। একই ইয়ার মধ‍্যে, একটা স্পিরিচুয়াল ট্রান্সের মধ‍্য দিয়া গেছি। এই গল্পটা ট্রান্সের মধ‍্যে এক বসায় লেখা। পরে গল্পটা টুকটাক এডিট করতে হৈসে। আমি আমার আরেক বন্ধু দিয়ে, ওই যে চাঁপাই নবাবগঞ্জ ভাষার যে অংশটা, ওইটা ওরে দিয়া ট্রান্সলেট করাইসি আবার। প্রথমে সাধারণ ভাষায় লিখসিলাম, পরে ওরে দিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ট্রান্সলেশনটা করাইসি। কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং করা হৈসে। কিন্তু পুরো গল্পটা একবারে লেখা। একটানে লেখা আর কি। ওই-ই একটা ট্রান্সের মধ‍্যে।

কাজল শাহনেওয়াজের গল্পের বই কাছিমগালা, গতকাল লাল এবং উপন‍্যাস শে’র প্রচ্ছদ।

 

স্ক্রাপ – ২: এই লোকগুলোর যে টাচ, সান্নিধ‍্য এইটা আমার বিরাট কাজ করসে। এই যে একটা নতুন শব্দের দিকে যাওয়া . . .

কা.শা.: আমার খুব সৌভাগ‍্য যে আমি বেশ কিছু মানে প্রপার লোকের সাথে আমার দেখা হৈসে। যেমন আব্দুল মান্নান সৈয়দ, মুস্তফা আনোয়ার, আবিদ আজাদ, হ‍্যা, এরকম, এবং আরো কিছু লোক আছে, বা আমাদের তরুণ বন্ধু যারা আছে, এই লোকগুলির, মানে যে, আপনি যেই গুনগুলার কথা বল্লেন, এই যে কনটেম্পরারি হওয়া, সময়কে ব‍্যাখ‍্যা করা, এবং আরবানাইজেশন এবং ননআরবানাইজেশনকে বুঝা, এই জিনিষগুলির জন‍্য এই লোকগুলোর যে টাচ, সান্নিধ‍্য এইটা আমার বিরাট কাজ করসে। এই যে একটা নতুন শব্দের দিকে যাওয়া . . .

শা.বি.র.: হুঁ-উঁ . . . 

কা.শা.: আমি কিন্তু হুবহু উনাদের কোন কিছু ব‍্যবহার করতেসি না, কিন্তু ওরা যে, ওদের কাছ থেকে আমি যে শক্তিটা পাইসি, এই যে ব‍্যবহার করতে হয়, জীবনে ব‍্যবহার করতে হয়, এই যে গ্রেট মাস্টারদের লেখা থেকে আমি যে শক্তিটা পাইসি, এইটাই হৈল সেই জায়গাটা, সোর্স অব অ‍্যানার্জি আমার। এর সাথে এখন যোগ হৈসে, কনটেম্পরারি একদম, রিসেন্ট যারা লেখালেখি করতেসে, ওদের সাথে আমার যে সংযোগ, এটাও কিন্তু আমাকে হেল্প করতেসে, একই সাথে আমাকে সমসায়িক হওয়ার জন‍্য যে ইয়াটা, ওদের কাছ থেকে আমি পাচ্ছি, শিক্ষাটা। এই সমসায়িক হওয়টা যেভাবে হৈতে হয়, সেটাও আমি শিখতেসি। 

শা.বি.র.: আপনার প্রিয় লেখক কারা? বা এই যে আপনি বল্লেন যে আপনি যাদের লেখা পড়েছেন, আপনার . . .বা এই যে . . 

কা.শা.: না আমার প্রিয়, আমি এই যে এক হাজার বইয়ের পিডিএফের কথা বল্লাম . . .

শা.বি.র.: হ‍্যা, হ‍্যা, সেটা . . .

কা.শা.: আমার তো মনে হয় এই একহাজারই আমার প্রিয়। . . . এইটা আমি যেটা মনে করছি যে কনটেম্পরারি, কারেন্ট লেখকদের নিয়ে কথা বলাটা, এটা রয়ে গেল। কেননা, আমার এক ধরনের, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে আমি আমার সমসাময়িক লেখকদের নিয়ে কথা বলি না . . .

শা.বি.র.: হা হা হা  . . .

কা.শা. : হা হা হা . . . সেটা আমি কাটাতে চাই আর কি . . .  

মানিকগঞ্জের আন্ধারমানিকে পদ্মার পাড়ে। ২০২৪। ছোটভাই মামুন সিদ্দিকীর ক‍্যামেরায় বড়ভাই কাজল শাহনেওয়াজ।

 

আড্ডার প্রথম পর্বের লিংক:

কাজল শাহনেওয়াজের সঙ্গে আড্ডা: শব্দ। সঙ্গ। এবং ড্রাগস:

পর্ব ১: “ওই ড্রাগ করতাম সারাক্ষণ। ওই সারারাত একটু খাইতেসি, একটু লিখতেসি . . . হি হি হি . . .