fbpx

নাটালি ডিয়াজ: কী হয় যদি আমি ‘পোস্টকলোনিয়াল’য়ের মত শব্দের পাশে ‘ভালবাসা’র মত একটা শব্দ বসাই?

আদিবাসী, ক‍্যুয়ার, এবং কবি নাটালি ডিয়াজ। ক‍্যাটাগরীক‍্যাল এই তিন আইডেন্টিটির বাইরে আরো অনেক পরিচয়ে তাকে পরিচিত করা হয় বা তিনি পরিচিত হন, কিন্তু ডিয়াজ এই সকল ‘পিন-আপ’ পরিচয় ছাটাই করে ‘আনপিনাবল’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও জারি রেখেছেন। কবিতা, কবিতার ভাষা, ভাষার খেলা, পরিচিত হওয়ার পরিচয়ের খোপ, খাপ বদলানোর ফাঁদ, প্রেম, উপনিবেশকারী আর উপনিবেশের অধীনস্তের সম্পর্কের মারপ‍্যাঁচ দুলে দুলে নেচে নেচে ছড়ায়ে ভেসে ওঠে তার শব্দে, কবিতায়। এই বছর তিনি পুলিৎজার পান, পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম (২০২০)/ Postcolonial Love Poem বইয়ের জন‍্য। এটা তার দ্বিতীয় কবিতার বই, প্রথম বই হোয়েন মাই ব্রাদার ওয়াজ অ‍্যান এজটেক (২০১২)/ When My Brother Was an Aztec। অ‍্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে পড়াচ্ছেন। স্কুল জীবনে বাস্কেটবল খেলতে খেলতে তিনি প্রফেশনাল বাস্কেটবল খেলোয়াড হয়ে ওঠেন এবং ইউরোপ, এশিয়ায় খেলে বেড়িয়ে একটা বিরতির পর আবার পড়াশুনায় ফেরত আসেন, কবিতায় মন বসান।

তিনটা ভিন্ন সাহিত‍্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের (পেন ডটকম, দ‍্য রুম্পাস ডটনেট, এবং দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট ডট কম) তিনটা কনর্ভাসেশন থেকে এই কথোপকথন সংকলন। সংকলন এ কারণে যে তিনটা সাক্ষাৎকার থেকেই বেশ কিছু অংশ বাদ দেয়া হয়েছে অনুবাদে এবং সেকারণে শিরোনামও কোন সাক্ষাৎকারের নির্দিষ্ট শিরোনাম থেকেই নেয়া নয়। চাইল কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন ‘স্টাডার্ড’নামক অনুবাদের নীতি-গাঁথা নিয়ে। অসুবিধা নাই। যে কোন অনুবাদ কনটেন্টে ভাষা যেমন স্বাধীন, বলা, বুঝানো এবং প্রকাশে, ফর্মও স্বাধীন পরিবেশনে।

মূল ইংরেজি ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন হাসিবা আলী বর্ণা

দ্যা রুমপাস: ভাষা একটা বিরাট ভূমিকা রেখেছে এই সংকলনে। এমনকি বইয়ের নাম ‘পোস্টকলোনিয়াল লাভ পোয়েম (Postcolonial Love Poem)’য়েও শব্দের খেলা দেখা যাচ্ছে। যেহেতু পোস্টকলোনিয়াল সাহিত‍্য সমালোচনায় উপনিবেশ স্থাপনকারী বা কলোনাইজার এবং কলোনাইজড বা উপনিবেশের অধীনস্থদের মধ‍্যকার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক কাঠামো বিশ্লেষনের বিষয়টা আমাদের বোঝাবুঝিতে আছে, এখানে সেটার মধ‍্যে একটা আগু-পিছু ব‍্যাপারের মতো দেখা যাচ্ছে। শব্দের খেলায় কিছু টুইস্ট এবং বুমেরাং আছে যেমন – ‘মজুরি দিয়ে আমি নির্মিত/ তাই আমি প্রেম এবং নিকৃষ্টতার প্রচার চালিয়ে যাই/I was built by wage. So I wage love and worse—’(এখানে ইংরেজি ওয়েজ শব্দ দুই ভিন্ন ধরনের অর্থে ব‍্যবহৃত হয়েছে)। এই যে একই শব্দ ব‍্যবহারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রয়োগ, এ নিয়ে কি কিছু বলতে চান আপনি? 

নাটালি ডিয়াজ: শব্দ হলো সবকিছু; এমন একটা জিনিষ যা এখনকার এবং যখন থেকে এর ব‍্যবহার শুরু হয়েছে , তার কোন কিছুই প্রত‍্যাখ‍্যান না করে অর্থ দাঁড় করায়। মানুষের ভাষা মানুষের মতোই চালিত হয় – এটা আমাদের অন‍্যতম শারীরিক এবং আবেগীয় টেকনোলজি বা প্রযুক্তি। ভাষা আগ্রাসি, এটা সংস্পর্শী, অর্থ উৎপাদনই সবসময় এর আকাঙ্খা। ভাষা আমার শরীর নয়, বরং আসলে আমার শরীর যা হয়ে উঠতে চায়, অন্যের শরীরের সাথে বা মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণির সাথে সে যেভাবে সম্পর্কিত হতে চায়- আমার শরীরের সেই অনুমান ও সংকেত হলো ভাষা। এটা পরিবর্তনশীল ও গতিময় – শব্দ, বাক্য বা লাইনের কাছে আমার যা প্রত্যাশা থাকে তা শেষ পর্যন্ত আমাকে ছেড়ে যায় এবং পাঠকের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে, পাঠকের নিজের সৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।

আমি এবং আমার পার্টনার যখন একসাথে থাকতাম, আমরা কখনো আমাদেরকে এইভাবে দেখতাম না বা ভাবতাম না যে সে একজন ক‍্যুয়ার কালো নারী আর আমি একজন মাহাভি আদিবাসী, বা একিমেল ওডামে আদাবাসী, ‍মেক্সিকান, ল‍্যাটিনক্স নারী।এর মানে এই না যে, আমরা এসব আইডেন্টিটি বলতে কী বুঝায় তা বুঝি না বা এসবের কী মানে আমাদের কাছে তা নিয়ে কথা বলি না . . .

‘পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম’ বাক‍্যাংশটার একটা ভাবনা পদ্ধতি এরকম যে আমি এর অসম্ভবতাকে, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় – আমার অভিজ্ঞতার ভেতরে এর অসম্ভবতাকে চিহ্ণিত করেছি। আমি শিখেছি যে এমন কিছু উপায় আছে যা দিয়ে আমি নির্দিষ্ট কিছু জীবনীশক্তিকে চিহ্নিত করতে পারি, ভাষা তার মধ‍্যে একটা, যেটা আমাকে অসম্ভবতাকে চিহ্ণিত করতে খুবই  সম্ভাবী করেছে। উপনিবেশকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাষাকে দখলদারিত্বের প্রথম উপকরণ হিসাবে বেছে নেয়, ভাষা এবং ভূমি। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক যোগাযোগে ভাষা আমাদের শরীর হয়ে ওঠে। কী হয় – ‘এর মানে কী’ এমন না, বরং আমি বুঝতে চাই কী হতে পারে – যদি আমি পাবলিক পেইজে আমার এই শরীরের আনন্দ আহবান করার সাহস করি? কী হয় যদি আমি ‘পোস্টকলোনিয়াল’য়ের মত শব্দের পাশে ‘ভালবাসা’র মত একটা শব্দ বসাই? তারা আলাদা নয় কিন্তু একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল  – এবং দুইটাই তামাদি, সময়ের প্রয়োজন ফুরায়া গেছে, যেরকম আমি শিখেছি আমার নিজের সম্পর্কে। আমার নিজের শরীরের মতো একটা শরীরে আমি সবকিছু, যা সবসময়ই ছিল- একইসাথে কাদামাটি ও স্বপ্ন, একটা নদী, আমার পূর্বসূরিরা, একটা শূন্যতা, একটা হাহাকার, একটা যুদ্ধ উৎসব, একটা স্পর্শ, একটা আশা, আনন্দ, একটা গল্প – এবং এখনকার এই আমি – সেইসব জিনিসের সাথে মিশে যাচ্ছি অন‍্য কোথাও, কোন স্রোতে, ঘটমানতার মধ‍্যে। সময় এবং জীবনীশক্তির এই চলমানতার মধ‍্যে কিছু কষ্টদায়ক, শোকগ্রস্থ এবং শূন‍্যতা সৃষ্টিকারী বিষয় আছে। আমাকেও অবশ‍্য যোগ‍্য ও সক্ষম হতে হবে আনন্দ পাওয়ার, আকাঙ্খা করার, অপবিত্র করার, মন্দিরের ভেতরে বা বাইরে অন‍্য কোথাও যা আছে সেইসব নেয়ার, নিজের কাছে ফেরত আসা হিসাবে।

নাটালি ডিয়াজের দ্বিতীয় কবিতার বই, পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম (২০২০), গ্রেউলফ প্রেস Graywolf Press। এই বছর (২০২১) কবিতার জন‍্য পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত

আইডেন্টিটি বা পরিচয় এমন একটা অস্ত্রে পরিনত হয়েছে যে এটা আমাদের বিরুদ্ধেই ব‍্যবহৃত হয়ে আসছে। মানে, আমি বুঝাতে চাইছি যে আমি একটা আদিবাসী রক্তের সনদপত্র ধারণ করি, যেটা চিনিয়ে দেয় যে আমার শরীরে যে রক্ত প্রবাহ চলছে, সেইটা একজন আদিবাসীর

দ‍্য রুম্পাস: টাইটেল কবিতা ‘পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম’ বিভিন্ন আইডেন্টিটি বা পরিচয়ের কথা বলে, যেমন: অ‍্যামেরিকান, মাহাভি, প্রেমি ইত‍্যাদি। কীভাবে ছন্দময় ভাষা আর তথ‍্যসূত্র দুনিয়ার সবকিছুকে এক সাথে ধারণ করছে?

নাটালি ডিয়াজ: আইডেন্টিটি বা পরিচয় হলো ওই সমস্ত ছোট্র ফাঁদগুলার একটা, যেইটা আমরা সবাই পেকেটে পুরে এবং মুখে নিয়ে ঘুরে বেড়াই কারো সামনে উপস্থাপন করতে অথবা আমাদের নিজস্ব সত্ত্বার মধ‍্যে পুরে ফেলতে। কারণ নিজেদের সম্পূর্ণ দেখানোর জন‍্য, এই দেশে এরকম পরিচয়ের চল আছে। আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, আমি যা কিছু ছিলাম তার তালিকা করেছি – নিজস্ব সত্ত্বাকে একটা প্রসঙ্গে পরিণত করেছি। যে প্রসঙ্গ ভান করে জানার যে আমরা কী এবং আমরা কী করেছি। ফলে সে ধারণা করতে পারে আমাদের কী আচরণ করা উচিত। কিন্তু পরিস্থিতি আসলে কী? এই জাতি আমাদের একীভূত করতে চায় না, ফলে আইডেন্টিটি বা পরিচয় এমন একটা অস্ত্রে পরিনত হয়েছে যে এটা আমাদের বিরুদ্ধেই ব‍্যবহৃত হয়ে আসছে। মানে, আমি বুঝাতে চাইছি যে আমি একটা আদিবাসী রক্তের সনদপত্র ধারণ করি, যেটা চিনিয়ে দেয় যে আমার শরীরে যে রক্ত প্রবাহ চলছে, সেইটা একজন আদিবাসীর।

কিন্তু যে জানে ভাষাকে কীভাবে হারিয়ে ফেলতে হয়, পাশাপাশি তার জন‍্য কীভাবে লড়তে হয়, এমন একজন ব‍্যক্তি হিসাবে মনে করি এই সমস্ত টার্ম ব‍্যবহার করে চিহ্নিত হওয়ার চাইতে ভাষার মাধ‍্যমে আমরা একে অপরের সাথে আরো ভালোভাবে সম্পর্কিত হতে পারি, কাছে আসতে পারি

সম্প্রতি আমি পুরা হতবাক হয়ে গেছি যখন আবিস্কার করলাম পিপল অব কালার/ POC বা উম‍্যান অব কালার/ WOC শব্দগুলার ব‍্যবহার – এটা এত দৃঢ়ভাবে আমার মধ‍্যে গেঁথে গেছে যে এটা যে সব সময় ব‍্যবহার করছি, সেটাই টের পাই নাই, আরো ভয়ানক ব‍্যাপার বুঝতে পারলাম যে প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্চতার অংশ হিসাবে আমি স্বেচ্ছায় এই পরিচয় ব‍্যবহার করছি। কী একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি এইটা যে এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই আমরা নিজেদের এবং আমাদের লোকদের পরিচিত করি। আইডেন্টিটি বা পরিচয় এমন একটা জিনিষের মতো ব‍্যবহৃত হয় যেন এটা পিন-আপ, আটকায়া রাখে এবং ধরে রাখে। এটা এরকম না যে আমি জানি না আইডেন্টিটি কী বা কীভাবে এটা কাজ করে, কিন্তু আমি এরকম কল্পনা করি – কীভাবে ‘আনপিনাবল’ হওয়া যায়, বা এইসব পরিচয়কে ছাটাই করে ফেলা যায়। আমি এবং আমার পার্টনার যখন একসাথে থাকতাম, আমরা কখনো আমাদেরকে এইভাবে দেখতাম না বা ভাবতাম না যে সে একজন ক‍্যুয়ার কালো নারী আর আমি একজন ক‍্যুয়ার মাহাভি আদিবাসী, বা একিমেল ওডামে আদিবাসী (Akimel O’odham), মেক্সিকান, ল‍্যাটিনক্স নারী। এর মানে এই না যে, আমরা এসব আইডেন্টিটি বলতে কী বুঝায় তা বুঝি না বা এসবের কী মানে আমাদের কাছে তা নিয়ে কথা বলি না, বা আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতায় আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের কী পরিচয় এই দুনিয়ায়, সেইসাথে আমরা দুজনে মিলে যে আমাদের নিজস্ব যৌথতা সেটা কী, এমন না যে এসব বলাবলি হয় না। এটা আমাকে খুব তাড়িত করে যে আমাদের কমিউনিটি বা পরিবারের অনেকেই (PoC, WoC) মার্কারগুলা ব‍্যবহার করে না। আমি এসব শব্দ ব্যবহার করি বেশিরভাগ সময়ই আমার পরিচিত জগতের বাইরের মানুষের সাথে। আমি এখনও জানি না এর বাইরে যেয়ে বেশি আর কী ভাবা যায়। কিন্তু যে জানে ভাষাকে কীভাবে হারিয়ে ফেলতে হয় পাশাপাশি তার জন্য কীভাবে লড়তে হয়, এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে মনে করি এই সমস্ত টার্ম ব‍্যবহার করে চিহ্ণিত হওয়ার চাইতে ভাষার মাধ‍্যমে আমরা একে অপরের সাথে আরো ভালোভাবে সম্পর্কিত হতে পারি, কাছে আসতে পারি।

নাটালি ডিয়াজ, ২০২১, ইনস্টাগ্রাম

আমরা নিজেরাই অনেকগুলা গল্প। এমনকি আমাদের নামগুলাও গল্প।

দ‍্য পেন টেন: আপনার পরিচয় কীভাবে আপনার লেখাকে আকৃতি দেয়? ‘লেখকের পরিচয়’ বলে কি আদৌ কিছু আছে?

নাটালি ডিয়াজ: ’আত্মপরিচয়’ অবশ্যই আছে। এটা আদতে কল্পিত, অভিক্ষিপ্ত। এবং আমরা প্রচলিতভাবে একে গ্রহণ করি, দৈব হিসেবে ধরি। আমার একটা কবিতার লাইন আছে,  ‘আমি যা বুঝিনা মেনে নেই বুঝি না, এরপর আমি হয়ে যাই এমন, যার বোঝাবুঝির কোনো প্রয়োজন নেই।/ (I obey what I don’t understand, then I become it, which needs no understanding.)’ অংশত আমি এটাই মনে করি।  এই দেশ আমাকে আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছে। এবং শুধু তাই নয়, আমি এর বেশিরভাগই বিশ্বাস করি এবং আমি তাই হয়ে গেছি।  এটার মানে এই নয় যে আমি এখনো আমার নিজস্বতায় ফিরতে পারব না বা এর বেশি কিছু হতে পারব না। 

আমি মনে করি না আমার লেখা কোন অ‍্যক্টিভিজম। তুলনামূলকভাবে এটা আমার জন‍্য নিরাপদ কাজ। লেখা একটা সক্রিয়তা, যেমন গায়েব করে ফেলাও একটা সক্রিয়তা

দ‍্য পেন টেন: আপনি কেন মনে করেন যে মানুষের গল্পের প্রয়োজন?

নাটালি ডিয়াজ: আমরা নিজেরাই অনেকগুলা গল্প। এমনকি আমাদের নামগুলাও গল্প। 

দ‍্য পেন টেন: আরও অনেককিছুর সাথেই, ‘পোস্টকলোনিয়াল লাভ পোয়েম’ মুছে ফেলা বা গায়েব করে ফেলার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। কীভাবে লেখক বা লেখা প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রভাব ফেলে?  কী ঘটে যখন নাই করে ফেলার প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করা হয়? 

নাটালি ডিয়াজ: আমি মনে করি না আমার লেখা কোন অ‍্যক্টিভিজম। তুলনামূলকভাবে এটা আমার জন্য নিরাপদ কাজ। লেখা একটা সক্রিয়তা, যেমন গায়েব করে ফেলাও একটা সক্রিয়তা। কিন্তু দুটোই ঘটে, অন্তত যা নিয়ে আমরা কথা বলছি, আমার কবিতায়- সাদা কাগজের নিয়ন্ত্রিত পৃষ্ঠায়। পৃষ্ঠার সক্রিয়তার বাইরে আমি এরকম কিছুকেই বেছে নিতে চাই, হতে পারে সেটা একটা প্রতিরোধের কাজ। হয়তো কবিতাগুলা আমার জীবনের জন‍্য কেবল একটা চর্চার ক্ষেত্র।

এই অনুভূতিটা পাওয়া যায় আপনার পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম’র ‘দ‍্যা ফার্স্ট ওয়াটার ইজ দ‍্যা বডি’ কবিতার লাইনগুলা পড়ার সময় . . . কেন আপনার মনে হয়েছে যে অ‍্যামেরিকা যাকে হুমকি হিসাবে দেখে, তাকে মিথ বানিয়ে ফেলে? আপনার লেখা কীভাবে অ‍্যামেরিকার এই মিথ বানিয়ে গায়েব করার বিষয়টিকে চ‍্যালেঞ্জ করে এবং এই যে অ‍্যামেরিকাকে আপনি মিথ হিসাবে দাবি করছেন, কোথায় পান এই শক্তি?

দ‍্য পেন টেন: ২০১৮ সালে এনপিআর (ন‍্যাশনাল পাবলিক রেডিও, অ‍্যামেরিকা)’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, ‘কিন্তু আমার জন‍্য নেটিভ অ‍্যামেরিকান বলাটা, একভাবে বলা যায় আমি নাই করে ফেলছি, জানেন? কারণ, আমি এখন যা, হ‍্যা, তার কিছুটা ন‍্যাটিভ অ‍্যামেরিকানের অংশ, কিন্তু একইসঙ্গে আবার অন‍্য কিছুও, কিছুটা বেশি, যেটা অ‍্যামেরিকা এখনও পুরাপুারি খেয়ে ফেলতে পারে নাই’। এই অনুভূতিটা পাওয়া যায়  আপনার পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম’য়ের ‘দ‍্য ফার্স্ট ওয়াটার ইজ দ‍্য বডি’ কবিতার লাইনগুলা পড়ার সময়: ‘সাদা মানুষদের জন‍্য যা হুমকি, তাকেই তারা প্রায়ই মিথ হিসাবে খারিজ করে/ আমি কখনোই থাকি নাই/ খাঁটি অ‍্যামেরিকায়/ অ‍্যামেরিকা আমার মিথ।/What threatens white people is often dismissed as myth. I have never been/true in America. America is my myth) কেন আপনার মনে হয়েছে যে অ‍্যামেরিকা যাকে হুমকি হিসাবে দেখে, তাকে মিথ বানিয়ে ফেলে? আপনার লেখা কীভাবে অ‍্যামেরিকার এই মিথ বানিয়ে গায়েব করার বিষয়টিকে চ‍্যালেঞ্জ করে এবং এই যে অ‍্যামেরিকাকে আপনি মিথ হিসাবে দাবি করছেন, কোথায় পান এই শক্তি? 

নাটালি ডিয়াজ: প্রতিটি সাম্রাজ্যই একটা মিথ। এটা একটা শুরুর গল্প, যা তার নিজস্ব হয়ে ওঠার ভান করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা একটা ভয়ঙ্কর কিছু। দেশপ্রেম কী, যদি না তা বার বার শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যাওয়ার উৎসব না হয়? নস্টালজিয়া খুব বিপদজনক কারণ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন‍্য এটা  বার বার ঘটতেই থাকে — আমরা যার জন‍্য অনুশোচনাগ্রস্থ হই, যা ফিরে পাওয়ার জন‍্য বেদনার্ত হই, প্রায়শই আমরা এত ভয়ঙ্করভাবে এখন অনুকরণ করি এবং তা প্রয়োগ করি যে যখন ফিরে দেখি ঘটনাগুলা মনে হয় সুন্দর, এবং এই নস্টালজিয়াই আমাদের চাওয়ায় যেন আমরা জিতি, সৃষ্টি করি আবার ধ্বংস করি বার বার।

ডিয়াজের প্রথম বই, হোয়েন মাই ব্রাদার ওয়াজ অ‍্যান এজটেক (২০১২), কপার ক‍্যানিয়ন প্রেস/ Copper Canyon Press

দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট: সৃজনশীলভাবে আটকে গেলে আপনি কী করেন?

নাটালি ডিয়াজ: আমি সৃজনশীলতায় আটকাই না। আমি নির্মিত হয়েছিলাম আমার শরীর ব‍্যবহার করতে এবং জানতে – এর সীমাবদ্ধতার ওপর আস্থা রাখতে, কেবলমাত্র সেগুলাই ভেঙ্গে যেতে পারে। আমার মন একজন অ্যাথলেটের মন ও শরীরের মত কাজ করে। আমি পৃষ্ঠার ওপর একটা ষাঁড়, অস্বস্থিকর ব‍্যাথার ভার টানি জোয়াল দিয়ে, মাটিতে আমার নিজস্ব কিছু দাগ টানি। যদি আমি কখনো হতাশ হই বা ক্ষুব্ধ বা বিরক্ত হই, তখন আমি আমার শরীর ব‍্যবহার করি। হাঁটতে, দৌড়াতে, প্রেম করতে, স্পর্শ করতে।

যখন আমার হার্ট রেট উপরের দিকে বাড়তে থাকে, তখন আমি বিস্মিত হতে শুরু করি। আমি একটা পশু, বা একটা মেশিন অথবা বিস্ময়ভরা একটা অলৌকিক ঘটনা, যেগুলার বেশিরভাগই অসম্ভব এবং হাস‍্যকর এবং আমার সকল বন্ধু, প্রিয়জনেরা জড়িয়ে আছে, যারা সংখ‍্যায় অনেক এবং যাদের চাওয়া অনেকগুলা অবিশ্বাস‍্য কঠিন ভ্রমন, এবং অনেক চিতাবাঘ, এবং অনেক-অনেক বারবন(অ‍্যামেরিকান হুইস্কি) এবং স্কচ (স্কটল‍্যান্ডের একধরনের মল্ট হুইস্কি) এবং আমার মা এবং কোয়টাস (নেকড়ের মতো দেখতে কুকুর) এবং রজার এবং অ‍্যাডা এবং থমাস এবং সোমাজ এবং রিকি এবং প্রেমিরা, এবং আরো অনেক অসংখ‍্য অসংখ‍্য জিনিস আছে যেগুলা লাফিয়ে বা মচকে বা লাথি খেয়ে অথবা ভেঙ্গে পড়ে একটা কিছুতে আটকে পড়ার জন‍্য, যেমন ক্রিয়েটিভিটি, সৃজনশীলতা। আমার মনে হয়, সৃজনশীলতা একটা ফাঁদ। আমি আমার স্টুডেন্টদের বলি, একে বরং টেনশন হিসাবে বলো, সৃজনশীলতা না। টেনশন বা দুশ্চিন্তা অ‍্যামেরিকায় অনেক সহজ, এবং ভালোবাসায়ও।      

আমার কবিতায় থাকার একটা কারণ ভাষা। একটা কারণ ক্ষুব্দতা। স্থাপত‍্য একটা কারণ। স্পর্শ অনুভূতি একটা কারণ। আমার ভাই একটা কারণ। মাঠ বা সেই গুহা যেখানে আমি যাই, আমার প্রেমিকাকে স্পর্শ করি সেটা একটা কারণ আমার কবিতায় থাকার

 দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট: “রাস্তার এক কোণ থেকে বের হয়ে কবিতায় এসেছি (coming to poetry from around a corner down the street)” বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন? 

নাটালি ডিয়াজ: আমি বিশ্বাস করি, আমি কবিতায় এসেছি চারপাশের কোণা থেকে, কানাগলি থেকে-যেখানে কবিতা দেখা দিতে যায় না; দেখা দেয় অশ্বারোহী সৈন্যরা, আর রেলপথ বেয়ে সেনাবাহিনী। তারা সবাই আসে। কেবল কবিতা আসে না।  

আমি যা বোঝাতে চাইছি, তা হলো বন্ধুত্বের কঠোরতা ও উগ্রবাদে আমার প্রয়োজন হয় কবি হয়ে উঠতে, আসলে যে কোন কিছু হতেই। কিন্তু আমি তাদের পাই যখন কবিতাকে তাদের একটা ছোট অংশ হয়ে উঠতে দেই। আমার কবিতায় থাকার একটা কারণ ভাষা। একটা কারণ ক্ষুব্ধতা। স্থাপত্য একটা কারণ। স্পর্শ অনুভূতি একটা কারণ। আমার ভাই একটা কারণ। মাঠ বা সেই গুহা যেখানে আমি যাই, আমার প্রেমিকাকে স্পর্শ করি সেটা একটা কারণ আমার কবিতায় থাকার। 

কবিতা হলো তাই, আমি যে ভালবাসা ও বিভ্রান্তি ফিল করি আমার প্রিয়তমদের জন্য, এই ভূমির জন্য এবং প্রতিটি জীবন্ত প্রাণের শক্তির জন্য। এটা একটা ঘর যেখানে প্রবেশের সহস্র পথ আছে। আমি তার সবগুলাই চেষ্টা করে দেখতে চাই। 

নাটালি ডিয়াজ, nataliegermainediaz.com

দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট: ধৈর্য আপনার লেখায় কীভাবে ছাপ ফেলে?

নাটালি ডিয়াজ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমি ধৈর্যশীল না। আমি উদ্বিগ্ন থাকি যা আমি ভালবাসি তা নিয়ে। সম্ভবত যা বোঝাতে চাইছি তা হলো, যখন আমি লিখি তখন আমি জরুরি হয়ে উঠি। ভাষা অত্যন্ত জরুরি, বেঁচে থাকা জরুরি। আমি অবশ্যই তা করি। উদ্বিগ্নতার বিপরীতে আমি ধৈর্যশীল তখনই যখন আমি কাজ করি। এর মাধ্যমে, অর্থাৎ আমি প্রকাশনার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল, কেননা আমি শিল্পের ঐ দিকটা বুঝিনা। 

স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে এটা অদ্ভুত ঠেকতে পারে এই বিবেচনা করলে যে, বিশেষত, আমি যে টেনশনের মধ‍্যে বসবাস করি তা একইসাথে আমার সৃজনশীলতা উছলে ওঠার উৎসও, এক সঙ্গতিহীন জায়গা। অনুমান করা যায় না, অননুমেয়, তখনই কেবল টেনশন ব‍্যাপারটা সঙ্গতিময় থাকে। টেনশনের এই ব‍্যাপারটাই একে মূল্যবান করে তোলে এর প্রতি আমাকে অনুরাগী হতে। এটাই সেই বিষয় যা তাকে আমার নিজস্ব করে তোলে। এ এক বিশৃঙ্খলা এবং বিস্ময় এবং পুরোপুরিই অজানা!

কিন্তু সৃষ্টির পর, তৈরির পর ও বিস্ময়ের পর, আমি আবার ধৈর্যে ফিরে আসি। আমি আবার ক্লান্ত ও সতর্ক হই, যতক্ষণ না আমি অনুভূতি ফিরে পাই। প্রকাশনার জগতে অনুভূতি খুঁজে পাওয়া কঠিন, বিশেষত যে প্রকাশনা জগত প্রথাগত অ‍্যামেরিকার ক্ষমতা কাঠামোর প্রতিরূপ। এমনকি পৃষ্ঠাটা সাদা হলেও। 

সত‍্য প্রায়শই তাই, সাদা মানুষেরা যা বর্ণনা করে ও চর্চা করে তাদের সাদাত্বের ক্ষমতা খাটিয়ে বাদামি মানুষদের বিরুদ্ধে ব‍্যবহার করতে। . . . আদিবাসীদের সরাসরি ধ্বংস করে গড়ে ওঠা এই অ‍্যামেরিকায় কীভাবে আমি নিজেকে ভালোবাসতে পারব যদি না আমি সত‍্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করি এবং দাবি না করি সেইসব যা অবিরাম আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে: ভালোবাসা, শক্তিমত্ত্বা, ভূমি, কোমলতা, সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা, স্বাস্থ‍‍্যসহ বহু কিছু।

নাটালি ডিয়াজ, nataliegermainediaz.com

দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট: আমি আপনার একটা বর্ণনা দেখেছি যেখানে আপনি লেখার মধ্য দিয়ে সত্য আবিস্কারের কথা বলেছেন: ‘আমি এটা কোনো একাডেমিক পড়াশুনা থেকে শিখিনি, পরিবার থেকে শিখেছি/I learned this not by any academic lesson, but within my family’ আপনি কি এই অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে কিছু বলবেন?

নাটালি ডিয়াজ: অ‍্যামেরিকায় সত্য একটা হাস্যকর শব্দ। এটা সেই জিনিস যা আমি সবচে কম বিশ্বাস করি (অথবা আমি ‘অ‍্যামেরিকা’ এবং ‘সত্য’ সমানভাবে সামান্যই বিশ্বাস করি)। সত্য প্রায়শই তাই, সাদা মানুষেরা যা বর্ণনা করে ও চর্চা করে তাদের সাদাত্বের ক্ষমতা খাটিয়ে বাদামি মানুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে। সত্য সম্পর্কে আমি যতটা জানি তা হল এটা পরিবর্তনশীল, এটা ক্ষমতার জায়গা দখল করে, একে বিশ্বাস করা যায় না। এটা গল্প বলার অগণিত পথের একটা মাত্র। যদি না সত‍্যকে বোঝার একটা বিস্তৃত আর উদ্বেগে ভরা কষ্টময় বোঝাবুঝি আমার না থাকতো , তাহলে আমি যে আরও অনেক সত্ত্বার ভিতর যেভাবে বেঁচে থাকি, যেটা আমি: আদিবাসি, মাহাভি, পিমা, ক্রীড়াবিদ, ল্যাটিন, ক্যাথলিক, ক‍্যুয়ার,… কীভাবে সেটা হতো। আদিবাসীদের সরাসরি ধ্বংস করে গড়ে ওঠা এই অ‍্যামেরিকায় কীভাবে আমি নিজেকে ভালবাসতে পারব যদি না আমি সত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করি এবং দাবি না করি সেইসব যা অবিরাম আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে: ভালবাসা, শক্তিমত্ত্বা, ভূমি, কোমলতা, সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা, স্বাস্থ্যসহ বহুকিছু। 

আমি গড়ে উঠেছি একটা বৃহৎ পরিবারে, তাই আলাপচারিতা, অজস্ত্র প্রশ্ন ও বিস্ময়ে আমার মাথা তড়িতায়িত হয়ে ওঠে। আমি যুথবদ্ধতা পছন্দ করি, কারণ এটা একটা তৃতীয় হাত তৈরি করে, যেটা যুথবদ্ধদের প্রত‍্যেকের থাকে

দ‍্য ক্রিয়েটিভ ইন্ডিপেনডেন্ট: যখন আপনি কাজ করেন না তখন কীভাবে আপনার সৃজনশীলতাকে লালন করেন? 

নাটালি ডিয়াজ: আমি গড়ে উঠেছি একটা বৃহৎ পরিবারে, তাই আলাপচারিতা, অজস্র প্রশ্ন ও বিস্ময়ে আমার মাথা তড়িতায়িত হয়ে ওঠে। আমি যুথবদ্ধতা পছন্দ করি, কারণ এটা একটা তৃতীয় হাত তৈরি করে, যেটা যুথবদ্ধদের প্রত‍্যেকের থাকে। আমার দুটাই হাত আছে, কিন্তু আমি আরেকটা তৃতীয় হাত উপহার পেয়েছি এভাবে। ভাবুন আপনি কত বেশি ধরতে পারবেন, স্পর্শ করতে পারবেন, তৈরি করতে পারবেন, গতি পাবেন এবং পৌঁছাতে পারবেন যদি একটা তৃতীয় হাত থাকে। আমি এমনকি আরো ভালভাবে নিজেকে স্পর্শ করতে পারি এই তিনটি হাতে।  

ফিচার ছবি: নাটালি ডিয়াজের ইনস্টাগ্রাম

বাৎচিতের মূলসূত্র: 

Jackson, Jared. “An Interview with Natalie Diaz.” The Pen Ten, 5 March 2020, https://pen.org/the-pen-ten-an-interview-with-natalie-diaz/

Rodriguez, Janet. “Ways to become Unpinnable: Talking with Natalie Diaz.” The Rumpus, 4 March 2020,

https://therumpus.net/2020/03/the-rumpus-interview-with-natalie-diaz/ 

Stosuy, Brandon. “On the Physicality of Writing.” The Creative Independent, 12 March, 2021, https://thecreativeindependent.com/people/natalie-diaz-on-the-physicality-of-writing/