fbpx

যেভাবে শিল্পকলা একাডেমী আটকে দিল বাহাস আর নাটক : টাইম লাইন ভিডিও

আনহা এফ খান

 

জাতীয় শিল্পকলার মূল হলে তীরন্দাজ নাট্যদলের আয়োজন শুরুর কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়, ২০ জুলাই। আরো দুটি নাটকের প্রদর্শনী ছিল একই সময়ে। সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার মূল গেইটের বাইরের বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহ করে নাট্যশালার গেইটে টিকেট দেখিয়ে প্রবেশ করছিলেন অপর দুটি নাটকের দর্শকরা। কিন্তু তীরন্দাজের আয়োজনের দর্শকরা প্রবেশ করতে পারছিলেন না।

তীরন্দাজের দুই পর্বের আয়োজনের প্রথম পর্বটি ছিল বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের পাশে নির্মাণ হতে যাওয়া  কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষ ও বিপক্ষ মতের যুক্তি-তর্ক-তথ্যের উপস্থাপন ও খন্ডনের আয়োজন ‘বাকবিতন্ডা’।  বিরোধী মতের প্রতিনিধি হিসেবে আয়োজক তীরন্দাজ ঠিক করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে। আর প্রকল্পের পক্ষে বাহাসে  অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় ১০ জনের জন্য।

কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন, মানে ২০ জুলাই সন্ধ্যায়, বাহাস আর নাটক দেখতে ঢোকার শুরুতেই মুখোমুখি হতে হয় ওইরকম অস্পষ্টতার। গেট আছে, বুথ আছে, টিকেট কেটে অন্য নাটক দেখার দর্শকরা ঠিকঠাক ঢুকছেন,কিন্তু সুন্দরবনকে বিষয় করা তীরন্দাজের বাহাস আর নাটক দেখতে কেন ঢোকা যাবে না, বোঝাই যাচ্ছিল না।

কিন্তু যাবতীয় অস্পষ্টতা ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পরিস্কার হয়ে যায়। মানে এই বাহাস, নাটক শিল্পকলায় চলবে না। তীরন্দাজের আয়োজনে বাহাস আর নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ।  কিন্তু কেন হঠাৎ করে বন্ধ করা হলো, সেটা তীরন্দাজ নাট্যদলের কাছে শিল্পকলা থেকে পাঠানো প্রাতিষ্ঠানিক চিঠিতেও উল্লেখ করা হয় নি।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথতায় সুন্দরবনের পাশে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও গত ১২ জুলাই হোটেল সোনারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত এক চুক্তি সইয়ে ঠিক করা হয় আগামি ৩/৪ মাসের মধ্যে সেখানে শুরু হতে যাচ্ছে অবকাঠামোগত নির্মান কাজ। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেণ্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানী (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড প্রতিষ্ঠান দুটি  ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় ভবন, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য বৈঠক করে।

সুন্দরবন থেকে মাত্র চৌদ্দ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের বিরুদ্ধে আবার নিয়মিত কর্মসূচি ভিত্তিক প্রতিবাদ করে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

টাইম লাইন ভিডিওতে চলুন দেখি তীরন্দাজ নাট্যদল আয়োজিত সুন্দরবন বিষয়ে ‘বাক বিতণ্ডা’ এবং নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় যেভাবে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমী।

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ১৬ মিনিট

সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমীর গেইটে তীরন্দাজ নাট্যদলের নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’র টিকেট খোঁজা হয়। পাওয়া যাবে কি যাবে না সে বিষয়ে অস্পষ্টতা গেইটে। সরাসরি কোন উত্তর নেই।

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৩৭ মিনিট

অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা পর তীরন্দাজ দল তাদের পরিচিত এবং শিল্পকলার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাধর নাট্য ব্যক্তিত্বদের ফোন করে কথা বলে বুঝতে পারেন, অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ “বাক বিতণ্ডা”, সেই বাহাস নিয়েই প্রশ্ন চলছে কর্তৃপক্ষের। বাহাস কেন?

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৩৮ মিনিট

নাটকের জন্য নির্ধারিত হলের চত্বর থেকে পুলিশ তখন বের করে দিয়েছে নাটকের কর্মী, দর্শনার্থীদের।  তারা তখন মূল গেটের ভেতরে অবস্থান করছিলেন  এবং শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক বক্তব্যের জন্য উৎসুক।

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিট

আয়োজক দল তীরন্দাজ তাদের বাহাসের বিপক্ষের বক্তা আনু মুহাম্মদসহ আরো কয়েকজনকে শিল্পকলার মূল গেইটের ভেতর ঢুকাতে সক্ষম হন। তখন বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না।

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪৬ মিনিট

“ আমি মনে করি যে সুন্দরবন নিয়ে কথা বলার এখনই আসল এবং উপযুক্ত সময়। আরো বেশি করে বলা উচিৎ, সবার বাড়ির সামনে গিয়ে বলা উচিৎ”

 

সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪৯

গেটের বাইরে অপেক্ষমান নাটক এবং বাহাসের দর্শনার্থীরা।অন্যান্য নাট্যদলের কর্মী, সাংবাদিকদের ভীড়ও অনেক গেটের বাইরে। কিন্তু গেইটে তালা। চাবি কোথায়?

 

সময় সন্ধ্যা ৭টা ২ মিনিট

সন্ধ্যা ৭টার দিকে  তীরন্দাজ নাট্যদল শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে  “বিষয়: জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন বাতিল” শিরোনামের অফিসিয়াল চিঠি পান। চিঠিতে শুধু হল নয়, দ্রুত দলটিকে ‘শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গন’ ত্যাগের অনুরোধও করা হয়।

 

সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট

উপস্থিতিদের অনুরোধ এবং সংবাদকর্মীদের বাড়িয়ে দেয়া মাইক্রোফোনে কথা বলতে থাকেন আনু মুহাম্মদ। তীরন্দাজ নাট্যদলের  সুন্দরবন নিয়ে বাকবিতণ্ডা অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারী ও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন,” সুন্দরবন যদি উন্নয়ন প্রকল্পই হয়, তাইলে কথা বলতে দিতে এত আপত্তি কেন? কথা শুনতে এত আপত্তি কেন?”